মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬: সম্পূর্ণ নোটস ও WBBSE প্রশ্ন-উত্তর গাইড

মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬ সমস্ত মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের স্বাগত। তোমাদের জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রস্তুতিকে আরও সহজ ও শক্তিশালী করতে আমরা নিয়ে এসেছি সম্পূর্ণ নোটস এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর। এই গাইডটি WBBSE-এর নতুন সিলেবাস অনুযায়ী তৈরি এবং এখানে বিগত বছরের প্রশ্ন (Madhyamik ’22, ’20, ’19) ও মডেল অ্যাক্টিভিটি টাস্কের সমাধানও রয়েছে।

অধ্যায়-১: জীবজগতে নিয়ন্ত্রণ ও সমন্বয় মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

উদ্ভিদ হরমোন: উদ্ভিদের রাসায়নিক সমন্বয়ক

অক্সিন (Auxin)

প্রশ্ন: উদ্ভিদদেহে অক্সিনের ভূমিকা লেখো।
অনুরূপ প্রশ্ন: অগ্রন্থ প্রকেটতা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে যে উদ্ভিদ হরমোন তার তিনটি ভূমিকা লেখো। [Model Activity Task]
② উদ্ভিদের বৃদ্ধি সংক্রান্ত কোন্ কোন্ কাজ অক্সিন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তার একটি তালিকা তৈরি করো। [Madhyamik ’22]

উত্তর: অক্সিনের ভূমিকা : উদ্ভিদদেহে অক্সিন নিম্নলিখিত ভূমিকাগুলি পালন করে। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

  • ① অগ্রস্থ প্রকটতা ও পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি হ্রাস: অক্সিনের প্রভাবে উদ্ভিদের কাণ্ডের অগ্রমুকুল বৃদ্ধি পায় ও পার্শ্বীয় বা কাক্ষিক মুকুলগুলির বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পার্শ্বীয় মুকুলের ওপর অগ্রমুকুলের এই প্রাধান্যকে অগ্রস্থ প্রকটতা বলে। এর ফলে কাণ্ড দৈর্ঘ্যে বৃদ্ধি পায়। কিন্তু, যদি অগ্রমুকুল কেটে ফেলা হয় সেক্ষেত্রে কাক্ষিক মুকুল দ্রুত বৃদ্ধি পেয়ে গাছটিকে ঝোপের আকৃতি দেয়।
  • ② কোষ বিভাজন ও কোষের আকার বৃদ্ধি: অক্সিন কোষে DNA-র পরিমাণ বৃদ্ধি করে কোষের বিভাজনে সাহায্য করে এবং কোষ বিভাজনের দ্বারা কোষের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এ ছাড়া অক্সিন কোষপ্রাচীরকে নমনীয় করে কোষের আকার ও আয়তন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এই হরমোনের প্রভাবে পরিণত কোষে কোষ গহ্বরের সৃষ্টি হয় যার ফলে কোষ আয়তনে বৃদ্ধি পায়।
  • ③ ফলের বৃদ্ধি: নিষিকের পর ডিম্বাশয়ে অক্সিনের পরিমাণ বাড়ে। এর প্রভাবে ডিম্বক বীজে এবং ডিম্বাশয় ফলে পরিণত হয়। অনেকসময় নিষিকের পূর্বেই ডিম্বাশয়ে অক্সিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তখন ডিম্বাশয় নিষিক ছাড়াই ফলে পরিণত হয়। কিন্তু নিষিক না হওয়ায় ডিম্বক বীজে পরিণত হয় না, ফলে বীজবিহীন ফল উৎপন্ন্ হয়। এইভাবে নিষিক ছাড়া ফল উৎপাদনকে পার্থেনোকার্পি বলা হয়। পার্থেনোকার্পিক ফল উৎপাদনে অক্সিনের ভূমিকা আছে।
  • ④ মূলের বৃদ্ধি: অক্সিন উদ্ভিদের মূলের সৃষ্টি ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। উদ্ভিদের মূল স্বল্প পরিমাণ অক্সিনে অধিক সংবেদনশীল, অর্থাৎ অক্সিনের স্বল্প ঘনত্বের মূলের বৃদ্ধি অধিক হয়। বেশি ঘনত্বের অক্সিন মূলের বৃদ্ধি ব্যাহত করে।
  • ⑤ ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণ: উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলন অক্সিনের অসম বণ্টনের ফলে সম্পন্ন হয়।

প্রশ্ন: উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিনের ভূমিকা চিত্রসহ আলোচনা করো।
অথবা, উদ্ভিদের ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন হরমোনের ভূমিকা লেখো। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

উত্তর: উদ্ভিদের ফোটোট্রপিক চলন এবং জিওট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রণে অক্সিন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রধানত আলোক ও অভিকর্ষের প্রভাবে অক্সিনের অসম বণ্টনের দ্বারাই ট্রপিক চলন নিয়ন্ত্রিত হয়। বিজ্ঞানী ওয়েণ্ট ও কোলোডিন পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেছেন, আলোর প্রভাবে অক্সিনের কার্যকারিতা হ্রাস পায়। অর্থাৎ অক্সিন আলোক-সংবেদনশীল। এই কারণে সর্বদা আলোর উৎসের বিপরীতে বা অন্ধকারের দিকে অক্সিনের ঘনত্ব বেশি হয়।

  • কাণ্ডের ক্ষেত্রে: বেশি ঘনত্বের অক্সিনে, আলোর বিপরীতে (অন্ধকারের দিকে) কোষের বিভাজন বেশি হয়। ফলে কাণ্ড আলোর দিকে এবং অভিকর্ষের বিপরীতে বেঁকে যায়। অর্থাৎ কাণ্ডে আলোক-অনুকূলবর্তী ও অভিকর্ষ-প্রতিকূলবর্তী চলন ঘটে।
  • মূলের ক্ষেত্রে: মূল অক্সিনের স্বল্প ঘনত্বের অধিক সংবেদনশীল। ফলে মূলের ক্ষেত্রে অক্সিনের কম ঘনত্বের দিকে, অর্থাৎ আলোর দিকে কোষ বিভাজন হার বেশি হয়। তাই মূল আলোর বিপরীতে তথা অভিকর্ষের দিকে বৃদ্ধি পায়। অর্থাৎ মূলে আলোক- প্রতিকূলবর্তী ও অভিকর্ষ-অনুকূলবর্তী চলন দেখা যায়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
উদ্ভিদের ফটোট্রপিক ও জিওট্রপিক চলনে অক্সিন হরমোনের ভূমিকা। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

জিব্বেরেলিন (Gibberellin)

প্রশ্ন: জিব্বেরেলিনের কয়েকটি প্রকারভেদের নাম লেখো। উদ্ভিদদেহে জিব্বেরেলিনের ভূমিকা উল্লেখ করো।

উত্তর:

  • জিব্বেরেলিনের প্রকারভেদ: জিব্বেরেলিনের রাসায়নিক নাম জিব্বেরেলিক অ্যাসিড। এর মধ্যে কয়েকটি হল GA₁, GA₃, GA₇।
  • জিব্বেরেলিনের ভূমিকা:
    • ① মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা ভঙ্গ: জিব্বেরেলিন মুকুল ও বীজের সুপ্তাবস্থা দূর করে অঙ্কুরোদগম ঘটায়। এটি বীজ মধ্যস্থ α-অ্যামাইলেজ, প্রোটিয়েজ প্রভৃতি উৎসেচকের সক্রিয়তা বৃদ্ধি করে।
    • ② পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি: জিব্বেরেলিন উদ্ভিদের কাণ্ডের পর্বমধ্যের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি করে কাণ্ডের সামগ্রিক দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি ঘটায়।
    • ③ ফলের বৃদ্ধি: আপেল, নাসপাতি, আঙুর প্রভৃতি ফলের আকার বৃদ্ধিতে এবং বীজবিহীন ফল তৈরিতে জিব্বেরেলিন সাহায্য করে।
    • ④ পাতা ও ফুলের আয়তন বৃদ্ধি: গাছের পাতা ও ফুলের আয়তন বৃদ্ধিতেও জিব্বেরেলিন সাহায্য করে।

সাইটোকাইনিন (Cytokinin)

প্রশ্ন: সাইটোকাইনিনের উৎসগুলি লেখো। উদ্ভিদদেহে সাইটোকাইনিনের ভূমিকা লেখো।

উত্তর:

  • সাইটোকাইনিনের উৎস: প্রধানত উদ্ভিদের সস্য (যেমন- ডাবের জল) ও ফল। এ ছাড়া টম্যাটো, পিচ ফলের নির্যাসেও পাওয়া যায়।
  • সাইটোকাইনিনের ভূমিকা:
    • ① কোষ বিভাজন ঘটানো: সাইটোকাইনিনের প্রধান কাজ হল উদ্ভিদকোষের সাইটোপ্লাজমের বিভাজন বা সাইটোকাইনেসিসে সাহায্য করা।
    • ② পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটানো: এই হরমোন পার্শ্বীয় মুকুলের বৃদ্ধি ঘটিয়ে উদ্ভিদটিকে ঝোপের মতো আকৃতি দান করে।
    • ③ পত্রমোচন বিলম্বিত করা: সাইটোকাইনিন পাতার গোড়ার কোশপ্রাচীরকে ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা করে, ফলে পত্রমোচন বিলম্বিত হয়।
    • ④ জরা বিলম্বিতকরণ: সাইটোকাইনিন উদ্ভিদের বার্ধক্য বা জরা বিলম্বিত করে। এই কারণে ফুলদানিতে রাখা ফুল বা পাতাবাহার সতেজ রাখতে এটি প্রয়োগ করা হয়।
    • ⑤ অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি রোধ করা: এটি অগ্রমুকুলের বৃদ্ধি রোধ করে উদ্ভিদের দৈর্ঘ্য বৃদ্ধি বিলম্বিত করে। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

কৃত্রিম হরমোনের ব্যবহার

প্রশ্ন: কৃষিকার্যে সংশ্লেষিত হরমোনের দুটি ভূমিকা উল্লেখ করো। [Madhyamik ’14, ’22, ’20]

উত্তর:

  • ① শাখাকলম থেকে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি: কৃত্রিম অক্সিন যেমন- IBA ও NAA প্রয়োগ করে গোলাপ, জবা প্রভৃতি গাছের শাখাকলম থেকে সহজে অস্থানিক মূল সৃষ্টি করা হয়।
  • ② অপরিণত ফলের মোচন রোধ: 2, 4-D, কৃত্রিম জিব্বেরেলিন প্রভৃতি হরমোন স্প্রে করে আম, কলা, আঙুর ইত্যাদি ফলের অকাল মোচন রোধ করা হয়।
  • ③ আগাছা বিনাশ: কৃত্রিম অক্সিন 2, 4-D আগাছানাশক বা উইডসাইড হিসেবে ব্যবহৃত হয়, যা ফসলকে সুরক্ষিত রেখে আগাছা বিনষ্ট করে।
  • ④ বীজবিহীন ফল উৎপাদন: কৃত্রিম অক্সিন ও জিব্বেরেলিন প্রয়োগে পার্থেনোকার্পির মাধ্যমে আপেল, আঙুর, পেঁপে প্রভৃতি বীজবিহীন ফল উৎপাদন করা হয়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

প্রাণী হরমোন ও এন্ডোক্রিন সিস্টেম

প্রশ্ন: প্রাণী হরমোনের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো। [Madhyamik ’07]

উত্তর:

  • ① উৎস: অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি বা নালীবিহীন গ্রন্থি থেকে ক্ষরিত হয়।
  • ② রাসায়নিক প্রকৃতি: প্রোটিন, পেপটাইড, গ্লাইকোপ্রোটিন বা স্টেরয়েডধর্মী হয়।
  • ③ পরিবহন: রক্ত ও লসিকার মাধ্যমে পরিবাহিত হয়ে লক্ষ্য অঙ্গে পৌঁছোয়।
  • ④ কাজ ও পরিণতি: নির্দিষ্ট অঙ্গের ওপর ক্রিয়া করে এবং কাজের পর বিনষ্ট হয়। তাই এদের রাসায়নিক বার্তাবাহক (chemical messenger) বলা হয়।
  • ⑤ নিয়ন্ত্রণ: ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির মাধ্যমে এদের ক্ষরণ নিয়ন্ত্রিত হয়।

প্রশ্ন: ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলতে কী বোঝ? একটি শব্দচিত্রসহ উদাহরণের সাহায্যে বুঝিয়ে দাও। [Madhyamik ’22] মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

উত্তর:

  • ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ: যখন কোনো একটি হরমোনের ক্ষরণ অপর কোনো একটি গ্রন্থির ক্ষরণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তখন সেই নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ বলে।
  • ব্যাখ্যা:
    • ঋণাত্মক ফিডব্যাক (Negative Feedback): রক্তে থাইরক্সিন (T₃ ও T₄)-এর মাত্রা বাড়লে তা হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারিকে সংকেত পাঠায়, ফলে TRH ও TSH হরমোনের ক্ষরণ কমে যায়। এর ফলে থাইরক্সিনের উৎপাদনও কমে গিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে।
    • ধনাত্মক ফিডব্যাক (Positive Feedback): রক্তে থাইরক্সিনের মাত্রা কমলে তা হাইপোথ্যালামাস ও পিটুইটারিকে উদ্দীপ্ত করে, ফলে TRH ও TSH ক্ষরণ বাড়ে। এর ফলে থাইরক্সিনের উৎপাদনও বেড়ে গিয়ে স্বাভাবিক মাত্রায় পৌঁছায়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
থাইরক্সিন হরমোনের ফিডব্যাক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি

বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি ও তাদের কাজ

হরমোনগ্রন্থি/উৎসপ্রধান কাজ
ইনসুলিনঅগ্ন্যাশয় (β-কোষ)রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায়, গ্লাইকোজেনেসিসে সাহায্য করে।
গ্লুকাগনঅগ্ন্যাশয় (α-কোষ)রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়, গ্লাইকোজেনোলাইসিস ঘটায়।
অ্যাড্রেনালিনঅ্যাড্রেনাল মেডুলাজরুরিকালীন বা আপৎকালীন হরমোন। হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ ও শ্বাসহার বাড়ায়।
ইস্ট্রোজেনডিম্বাশয় (গ্রাফিয়ান ফলিকল)স্ত্রীদেহের গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশ করে, রজঃচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
প্রোজেস্টেরনডিম্বাশয় (পীতগ্রন্থি)গর্ভাবস্থা বজায় রাখে, অমরা গঠনে সাহায্য করে।
টেস্টোস্টেরনশুক্রাশয় (লেডিগের আন্তরকোষ)শুক্রাণু উৎপাদনে ও পুরুষদের গৌণ যৌন লক্ষণ প্রকাশে সাহায্য করে।
ADHপশ্চাৎ পিটুইটারিবৃক্কীয় নালিকায় জলের পুনঃশোষণ বাড়িয়ে মূত্রের পরিমাণ কমায়।

প্রশ্ন: ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস ও ডায়াবেটিস মেলিটাসের পার্থক্য কী? উভয় রোগের দুটি করে উপসর্গ লেখো। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

উত্তর:

বিষয়ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসডায়াবেটিস মেলিটাস
হরমোনগত কারণADH হরমোনের স্বল্প ক্ষরণের ফলে হয়।ইনসুলিন হরমোনের স্বল্প ক্ষরণের ফলে হয়।
প্রধান উপসর্গমূত্রের পরিমাণ বেড়ে যায় (বহুমূত্র), বারবার জল তেষ্টা পায়।রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায় (হাইপারগ্লাইসেমিয়া), মূত্রের সঙ্গে শর্করা নির্গত হয় (গ্লুকোসুরিয়া)।

স্নায়ুতন্ত্র (Nervous System)

প্রশ্ন: নিউরনের কার্যগত শ্রেণিবিন্যাস বর্ণনা করো।

উত্তর: কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী নিউরোন তিন ধরনের:

  • ① সংজ্ঞাবহ নিউরোন (Sensory Neuron): গ্রাহক থেকে উদ্দীপনা কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে বহন করে।
  • ② আজ্ঞাবহ নিউরোন (Motor Neuron): কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র থেকে নির্দেশ কারক অঙ্গে (পেশি বা গ্রন্থি) বহন করে।
  • ③ সহযোগী নিউরোন (Association Neuron): সংজ্ঞাবহ ও আজ্ঞাবহ নিউরোনের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে।

প্রশ্ন: মানব মস্তিষ্কের যে-কোনো পাঁচটি অংশের নাম, অবস্থান ও ভূমিকা লেখো। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

উত্তর:

অংশের নামঅবস্থানভূমিকা
গুরুমস্তিষ্কমস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশবুদ্ধি, স্মৃতি, চিন্তা, চেতনা ও বিভিন্ন সংবেদী অঙ্গের কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।
থ্যালামাসগুরুমস্তিষ্কের নীচেচাপ, তাপ, বেদনা ইত্যাদি সংবেদী উদ্দীপনার রিলে কেন্দ্র হিসেবে কাজ করে।
হাইপোথ্যালামাসথ্যালামাসের নীচেক্ষুধা, তৃষ্ণা, নিদ্রা, দেহের উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণ করে ও পিটুইটারির ক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
লঘুমস্তিষ্কগুরুমস্তিষ্কের পিছনে নীচেদেহের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ঐচ্ছিক পেশির চলন নিয়ন্ত্রণ করে।
সুষুম্নাশীর্ষকপনসের নীচেহৃৎস্পন্দন, শ্বাসকার্য, খাদ্য গলাধঃকরণ ইত্যাদি অনৈচ্ছিক কাজ নিয়ন্ত্রণ করে।

অধ্যায়-১: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (2 Marks) মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

  • প্রকরণ চলন: কোষের রসস্ফীতির তারতম্যের জন্য উদ্ভিদ-অঙ্গের যে স্বতঃস্ফূর্ত বক্রচলন দেখা যায়, তাকে প্রকরণ চলন বলে। উদাহরণ: বনচাঁড়ালের পার্শ্বীয় পত্রকের ওঠানামা।
  • ট্যাকটিক চলন: বহিঃস্থ উদ্দীপকের প্রভাবে সমগ্র উদ্ভিদদেহের স্থান পরিবর্তন। উদাহরণ: ভলভক্স-এর আলোর দিকে যাওয়া।
  • ট্রপিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন বহিঃস্থ উদ্দীপকের গতিপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণ: কাণ্ডের আলোক উৎসের দিকে চলন।
  • ন্যাস্টিক চলন: উদ্ভিদ-অঙ্গের বক্রচলন যখন উদ্দীপকের তীব্রতার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উদাহরণ: সূর্যমুখী ফুলের প্রস্ফুটন। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • অগ্ন্যাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলে কেন? কারণ অগ্ন্যাশয়ের অন্তঃক্ষরা অংশ (আইলেটস অফ ল্যাঙ্গারহ্যান্স) থেকে হরমোন এবং বহিঃক্ষরা অংশ থেকে পাচক রস (উৎসেচক) নিঃসৃত হয়।
  • অ্যাড্রেনালিনকে ‘আপৎকালীন হরমোন’ বলে কেন? কারণ ভয়, রাগ, উত্তেজনা ইত্যাদি জরুরিকালীন অবস্থায় এই হরমোন ক্ষরিত হয়ে দেহকে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত করে।
  • প্রতিবর্ত ক্রিয়া: কোনো বাহ্যিক বা অভ্যন্তরীণ উদ্দীপনার প্রভাবে প্রাণিদেহের তাৎক্ষণিক, স্বতঃস্ফূর্ত ও অনৈচ্ছিক স্নায়বিক প্রতিক্রিয়া। উদাহরণ: চোখে আলো পড়লে চোখ বুজে ফেলা।
  • উপযোজন: যে প্রক্রিয়ার দ্বারা চোখের লেন্সের বক্রতার পরিবর্তন ঘটিয়ে কাছের ও দূরের বস্তু দেখার ব্যবস্থা করা হয়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • মায়োপিয়া (Myopia): চোখের যে ত্রুটির কারণে নিকটের দৃষ্টি ঠিক থাকলেও দূরের দৃষ্টি ব্যাহত হয়। অবতল লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহার করে এর প্রতিকার করা হয়।
  • হাইপারমেট্রোপিয়া (Hypermetropia): চোখের যে ত্রুটির জন্য দূরের দৃষ্টি ঠিক থাকলেও কাছের দৃষ্টি ব্যাহত হয়। উত্তল লেন্সযুক্ত চশমা ব্যবহার করে এর প্রতিকার করা হয়।

অধ্যায়-২: জীবনের প্রবাহমানতা মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

ক্রোমোজোম, DNA ও জিন

প্রশ্ন: ক্রোমোজোম, DNA ও জিনের মধ্যে অন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা করো। [Madhyamik ’17, ’22]

উত্তর:

  • ক্রোমোজোম: ইউক্যারিওটিক কোশের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত DNA ও প্রোটিন দ্বারা গঠিত সূত্রাকার সংগঠন যা বংশগত বৈশিষ্ট্য বহন করে। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • DNA: ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড, যা জীবের জেনেটিক নির্দেশাবলী বহন করে।
  • জিন: DNA-এর একটি নির্দিষ্ট অংশ যা একটি নির্দিষ্ট প্রোটিন সংশ্লেষের সংকেত বহন করে এবং জীবের একটি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণ করে। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • সম্পর্ক: জিন হল DNA-এর অংশ, এবং এই দীর্ঘ DNA অণু প্রোটিনের (হিস্টোন) সাথে ঘনভাবে কুণ্ডলীকৃত হয়ে ক্রোমোজোম গঠন করে। অর্থাৎ, জিন → DNA → ক্রোমোজোম।

কোষচক্র ও কোষ বিভাজন

প্রশ্ন: কোষচক্র বলতে কী বোঝ? এর বিভিন্ন দশা বর্ণনা করো।

উত্তর:

  • কোষচক্র: একটি কোষের সৃষ্টি থেকে তার বিভাজনের শেষ পর্যন্ত ঘটনাবলীর চক্রাকার আবর্তনকে কোষচক্র বলে। এর দুটি প্রধান দশা: মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
    1. ইন্টারফেজ (বিশ্রাম দশা): কোষ বিভাজনের প্রস্তুতি পর্ব। এর তিনটি উপদশা: G₁, S (DNA সংশ্লেষ), এবং G₂।
    2. মাইটোটিক বা M দশা (বিভাজন দশা): প্রকৃত কোষ বিভাজন ঘটে। এর দুটি পর্যায়: ক্যারিওকাইনেসিস (নিউক্লিয়াসের বিভাজন) ও সাইটোকাইনেসিস (সাইটোপ্লাজমের বিভাজন)।

মাইটোটসিস বনাম মিয়োসিস

বিষয়মাইটোটসিসমিয়োসিস
সম্পাদনের স্থানদেহকোষজনন মাতৃকোষ
অপত্য কোশের সংখ্যাদুটিচারটি
ক্রোমোজোম সংখ্যামাতৃকোষের সমান (2n) থাকে (সমবিভাজন)মাতৃকোষের অর্ধেক (n) হয়ে যায় (হ্রাসবিভাজন)
তাৎপর্যবৃদ্ধি, ক্ষয়পূরণ, অঙ্গজ জননগ্যামেট বা রেণু উৎপাদন, প্রকরণ সৃষ্টি

প্রশ্ন: ক্রসিং ওভার পদ্ধতিটি ব্যাখ্যা করো। এর গুরুত্ব লেখো। [Madhyamik ’22]

উত্তর:

  • ক্রসিং ওভার: মিয়োসিস-I এর প্রোফেজ-I দশায় সমসংস্থ ক্রোমোজোমের নন-সিস্টার ক্রোমাটিড দুটির মধ্যে খণ্ডাংশের বিনিময়কে ক্রসিং ওভার বলে। এর ফলে জিনের নতুন সমন্বয় ঘটে।
  • গুরুত্ব: ① নতুন জিনগত পুনর্বিন্যাস ঘটে ফলে প্রকরণ সৃষ্টি হয় যা অভিব্যক্তিতে সাহায্য করে। ② এটি প্রমাণ করে যে ক্রোমোজোমে জিনগুলি রৈখিকভাবে অবস্থান করে। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

জনন

প্রশ্ন: উপযুক্ত উদাহরণসহ অযৌন জননের পাঁচটি পদ্ধতি বর্ণনা করো। [Madhyamik ’19]

উত্তর:

  • ① বিভাজন: এককোষী জীব (অ্যামিবা, ব্যাকটেরিয়া) এই পদ্ধতিতে সংখ্যাবৃদ্ধি করে।
  • ② কোরকোদগম: জনিতৃর দেহ থেকে কোরক বা বাড সৃষ্টি হয় যা পরে বিচ্ছিন্ন হয়ে অপত্য জীব গঠন করে (ইস্ট, হাইড্রা)।
  • ③ খণ্ডীভবন: জনিতৃ দেহ খণ্ডিত হয়ে প্রতিটি খণ্ড থেকে অপত্য জীব তৈরি হয় (স্পাইরোগাইরা)।
  • ④ পুনরুৎপাদন: দেহাংশ থেকে সম্পূর্ণ নতুন জীব সৃষ্টি হয় (প্ল্যানেরিয়া)।
  • ⑤ রেণু উৎপাদন: রেণু বা স্পোরের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয় (মস, ফার্ন, ছত্রাক)। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

অধ্যায়-২: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (2 Marks)

  • অটোজোম: দেহজ বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্রোমোজোম। মানুষের 22 জোড়া অটোজোম আছে।
  • অ্যালোজোম: লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোজোম (X ও Y)। মানুষের 1 জোড়া অ্যালোজোম আছে।
  • মাইটোটসিসকে সমবিভাজন বলে কেন? কারণ এই বিভাজনে উৎপন্ন অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের সমান থাকে।
  • মিয়োসিসকে হ্রাস বিভাজন বলা হয় কেন? কারণ এই বিভাজনে উৎপন্ন অপত্য কোষের ক্রোমোজোম সংখ্যা মাতৃকোষের অর্ধেক হয়ে যায়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • স্টক ও সিয়ন: জোড়কলমের ক্ষেত্রে, মূলসহ গাছের যে অংশে অন্য গাছের শাখা জোড়া লাগানো হয়, তাকে স্টক বলে। আর যে উন্নত গাছের শাখাটি জোড়া লাগানো হয়, তাকে সিয়ন বলে।

অধ্যায়-৩: বংশগতি এবং কয়েকটি সাধারণ জিনগত রোগ

মেন্ডেলের বংশগতির সূত্র

প্রশ্ন: সংকরায়ণ পরীক্ষার জন্য মেন্ডেল কর্তৃক মটর গাছ নির্বাচনের কারণগুলি লেখো।

উত্তর:

  • সংক্ষিপ্ত জীবনচক্র: মটর গাছ একবর্ষজীবী।
  • উভলিঙ্গ ফুল: স্বপরাগযোগ ঘটানো সহজ।
  • ইতর পরাগযোগ সম্ভব: প্রয়োজনে কৃত্রিমভাবে ইতর পরাগযোগ ঘটানো যায়।
  • বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য: সাত জোড়া সুস্পষ্ট বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্য বর্তমান।
  • বিশুদ্ধ উদ্ভিদ: সহজে খাঁটি বা বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন উদ্ভিদ পাওয়া যায়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

অসম্পূর্ণ প্রকটতা

প্রশ্ন: সন্ধ্যামালতী ফুলের ক্ষেত্রে F₂ জনুতে মেন্ডেলের বংশগতি সংক্রান্ত প্রথম সূত্রের বিচ্যুতি কীভাবে প্রকাশিত হয়, তা একটি ক্রসের মাধ্যমে দেখাও।

উত্তর:

  • অসম্পূর্ণ প্রকটতা: যখন দুটি বিপরীত বৈশিষ্ট্যের সংকরায়ণে প্রথম অপত্য জনুতে কোনো অন্তর্বর্তী বৈশিষ্ট্যের প্রকাশ ঘটে। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • ব্যাখ্যা: বিশুদ্ধ লাল ফুল (RR) ও বিশুদ্ধ সাদা ফুল (rr) যুক্ত সন্ধ্যামালতী গাছের সংকরায়ণে F₁ জনুতে সব ফুল গোলাপি (Rr) হয়। F₁ জনুর মধ্যে স্বপরাগযোগ ঘটালে F₂ জনুতে ফিনোটাইপিক ও জিনোটাইপিক অনুপাত উভয়ই 1 (লাল) : 2 (গোলাপি) : 1 (সাদা) হয়, যা মেন্ডেলের সূত্রের (3:1) বিচ্যুতি।

লিঙ্গ নির্ধারণ ও জিনগত রোগ

প্রশ্ন: মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণ কীভাবে হয় তা একটি ক্রসের সাহায্যে দেখাও। [Madhyamik ’18, ’22]

উত্তর: মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণে পিতার ভূমিকাই প্রধান।

  • মাতা (44A + XX) সর্বদা X ক্রোমোজোমযুক্ত ডিম্বাণু উৎপাদন করেন।
  • পিতা (44A + XY) দু-প্রকার শুক্রাণু উৎপাদন করেন: X-যুক্ত ও Y-যুক্ত।
  • যদি X-যুক্ত শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, তবে সন্তান কন্যা (XX) হয়।
  • যদি Y-যুক্ত শুক্রাণু ডিম্বাণুকে নিষিক্ত করে, তবে সন্তান পুত্র (XY) হয়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের চেকার বোর্ড

প্রশ্ন: থ্যালাসেমিয়া রোগের উপসর্গগুলি উল্লেখ করো। [Madhyamik ’17, ’20]

উত্তর:

  • অ্যানিমিয়া: হিমোগ্লোবিন উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় তীব্র রক্তাল্পতা দেখা যায়।
  • লৌহ সঞ্চয়: বারবার রক্ত নেওয়ার ফলে হৃৎপিণ্ড, যকৃৎ, প্লীহাতে অতিরিক্ত লোহা জমে অঙ্গগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • হাড়ের গঠন বিকৃতি: অস্থিমজ্জা প্রসারিত হওয়ায় মুখের ও মাথার খুলির হাড়ের গঠন অস্বাভাবিক হয়।
  • যকৃৎ ও প্লীহার বৃদ্ধি (হেপাটোস্প্লিনোমেগালি)।

প্রশ্ন: হিমোফিলিয়া কী?

উত্তর: এটি একটি X-সংযোজিত প্রচ্ছন্ন জিনঘটিত রোগ, যার ফলে রক্ততঞ্চনকারী ফ্যাক্টরের অভাবে ক্ষতস্থান থেকে রক্তক্ষরণ বন্ধ হতে চায় না।

অধ্যায়-৩: সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (2 Marks)

  • ব্যাক ক্রস: F₁ জনুর সংকর জীবের সঙ্গে যেকোনো জনিতৃ জীবের (প্রকট বা প্রচ্ছন্ন) সংকরায়ণ।
  • টেস্ট ক্রস: F₁ জনুর সংকর জীবের সঙ্গে বিশুদ্ধ প্রচ্ছন্ন জনিতৃর সংকরায়ণ। এর সাহায্যে জীবের জিনোটাইপ নির্ণয় করা হয়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • ক্রিস-ক্রস উত্তরাধিকার: যখন কোনো বৈশিষ্ট্য মায়ের থেকে পুত্রে এবং পিতার থেকে তার কন্যায় সঞ্চারিত হয় (যেমন- হিমোফিলিয়া, বর্ণান্ধতা)।
  • জেনেটিক কাউন্সেলিং: কোনো দম্পতির জিনগত রোগের ইতিহাস বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যৎ সন্তানের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নির্ণয় ও পরামর্শদান।

অধ্যায়-৪: অভিব্যক্তি ও অভিযোজন

জীবনের উৎপত্তি ও অভিব্যক্তি

প্রশ্ন: জীবনের উৎপত্তি সম্পর্কে মিলার এবং উরে-র পরীক্ষার গুরুত্ব ও সীমাবদ্ধতা সহ পরীক্ষা ব্যবস্থাটি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর:

  • পরীক্ষা ব্যবস্থা: বিজ্ঞানী স্ট্যানলি মিলার এবং হ্যারল্ড উরে (1952) একটি ফ্লাস্কে প্রাচীন পৃথিবীর পরিবেশের মতো মিথেন, অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন (2:2:1 অনুপাতে) ও জলীয় বাষ্প নিয়ে তাতে উচ্চ ভোল্টেজের তড়িৎপ্রবাহ (বজ্রপাতের বিকল্প) চালনা করেন। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • পর্যবেক্ষণ ও সিদ্ধান্ত: এক সপ্তাহ পর তাঁরা ফ্লাস্কের তরলে গ্লাইসিন, অ্যালানিন-এর মতো অ্যামিনো অ্যাসিড খুঁজে পান। এই পরীক্ষা প্রমাণ করে যে, আদিম পৃথিবীতে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগ (জীবনের মূল উপাদান) সৃষ্টি হওয়া সম্ভব ছিল। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬
  • গুরুত্ব: এটি ওপারিন-হ্যালডেনের রাসায়নিক বিবর্তনবাদকে সমর্থন করে।
  • সীমাবদ্ধতা: এটি শুধু সরল জৈব যৌগ তৈরি করতে পেরেছে, কিন্তু তা থেকে কীভাবে জটিল জীব সৃষ্টি হলো তা ব্যাখ্যা করতে পারেনি।

বিবর্তনের মতবাদ

ল্যামার্কবাদ

প্রশ্ন: ল্যামার্কের বিবর্তন তত্ত্বের মূল বক্তব্যগুলির উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ল্যামার্কের মতবাদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়গুলি হলো:

  • ব্যবহার ও অব্যবহারের সূত্র: জীবের কোনো অঙ্গের ক্রমাগত ব্যবহার অঙ্গটিকে শক্তিশালী করে এবং অব্যবহার তাকে দুর্বল ও বিলুপ্ত করে। উদাহরণ: জিরাফের লম্বা গলা (ব্যবহার) ও সাপের পা বিলুপ্তি (অব্যবহার)।
  • অর্জিত বৈশিষ্ট্যের বংশানুসরণ: জীব তার জীবনকালে যে বৈশিষ্ট্য অর্জন করে, তা পরবর্তী প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়। মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

ডারউইনবাদ

প্রশ্ন: বিবর্তনের সপক্ষে ডারউইনের মতবাদ সম্বন্ধে আলোচনা করো। [Madhyamik ’20]

উত্তর: ডারউইনের প্রাকৃতিক নির্বাচনবাদের মূল বক্তব্য:

  • অত্যাধিক হারে বংশবৃদ্ধি: জীবের সহজাত প্রবণতা হলো জ্যামিতিক হারে সংখ্যাবৃদ্ধি করা।
  • অস্তিত্বের জন্য সংগ্রাম: সীমিত খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য জীবকে সংগ্রাম করতে হয়।
  • প্রকরণ বা ভেদ: দুটি জীব কখনোই হুবহু একরকম হয় না, তাদের মধ্যে পার্থক্য থাকে।
  • যোগ্যতমের উদ্বর্তন ও প্রাকৃতিক নির্বাচন: অনুকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা জীবনসংগ্রামে টিকে থাকে এবং প্রকৃতি তাদের নির্বাচন করে। প্রতিকূল প্রকরণযুক্ত জীবেরা বিলুপ্ত হয়।
  • নতুন প্রজাতির উৎপত্তি: অনুকূল প্রকরণগুলি বংশপরম্পরায় পুঞ্জীভূত হয়ে নতুন প্রজাতির সৃষ্টি করে।

অভিযোজন

প্রশ্ন: লবণ সহনের জন্য সুন্দরী গাছের যে-কোনো দুটি অভিযোজন বর্ণনা করো। [Madhyamik ’19]

উত্তর:

  • শ্বাসমূল (নিউম্যাটোফোর): লবণাক্ত কর্দমাক্ত মাটিতে অক্সিজেনের অভাব মেটানোর জন্য মূলের শাখাপ্রশাখা অভিকর্ষের বিপরীতে মাটির উপরে উঠে আসে এবং তার মাথায় থাকা শ্বাসছিদ্র দিয়ে বায়ু থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে।
  • জরায়ুজ অঙ্কুরোদগম: ফল গাছে থাকা অবস্থাতেই বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে, যাতে চারাগাছটি লবণাক্ত মাটিতে সহজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।

প্রশ্ন: শিম্পাঞ্জির সমস্যা সমাধান দক্ষতার দুটি উদাহরণ দাও। [Madhyamik ’23]

উত্তর:

  • উইপোকা শিকার: শিম্পাঞ্জিরা গাছের ডালকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে উইঢিপির মধ্যে গর্ত করে এবং সরু কাঠি ঢুকিয়ে উইপোকা বের করে খায়।
  • বাদামের খোলা ভাঙা: তারা পাথরকে হাতুড়ি ও নেহাই-এর মতো ব্যবহার করে শক্ত বাদামের খোলা ভাঙে।

প্রশ্ন: মৌনৃত্যের মাধ্যমে মৌমাছির বার্তা আদানপ্রদান কীভাবে ঘটে, তা বর্ণনা করো। [Madhyamik ’17, ’23]

উত্তর: শ্রমিক মৌমাছিরা খাদ্যের উৎসের অবস্থান ও দূরত্ব জানানোর জন্য দু-ধরনের নৃত্য করে:

  • বৃত্তাকার নৃত্য (Round Dance): খাদ্যের উৎস কাছাকাছি (৫০-৭৫ মিটারের মধ্যে) হলে এই নৃত্য করে।
  • ওয়াগ্ল নৃত্য (Waggle Dance): খাদ্যের উৎস দূরে হলে এই নৃত্য করে। এই নৃত্যের মাধ্যমে তারা সূর্যের সাপেক্ষে খাদ্যের সঠিক দিক ও দূরত্ব বুঝিয়ে দেয়।

উপসংহার:
আশা করি, এই সম্পূর্ণ নোটস এবং প্রশ্নোত্তর তোমাদের মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রস্তুতিতে অনেক সাহায্য করবে। প্রতিটি বিষয় ভালোভাবে বুঝে পড়লে এবং নিয়মিত অনুশীলন করলে সাফল্য নিশ্চিত। তোমাদের পরীক্ষার জন্য অনেক শুভেচ্ছা মাধ্যমিক জীবন বিজ্ঞান ২০২৬

Leave a Comment