কোনি (Koni) উপন্যাস প্রশ্নোত্তর | মাধ্যমিক বাংলা সহায়ক পাঠ সাজেশন | Moti Nandi

মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা, তোমাদের বাংলা সহায়ক পাঠ ‘কোনি’ নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। মতি নন্দীর লেখা এই অসামান্য উপন্যাসটি থেকে পরীক্ষায় সম্পূর্ণ নম্বর পেতে প্রয়োজন সঠিক প্রস্তুতি ও নির্ভরযোগ্য সাজেশন। তোমাদের কথা মাথায় রেখেই, এই পোস্টে আমরা ‘কোনি’ উপন্যাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন-উত্তর, কোনির চরিত্র বিশ্লেষণক্ষিতীশ সিংহের অবদান এবং বিভিন্ন পরিচ্ছেদের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তর ও সাজেশনটি ভালোভাবে অনুশীলন করলে কোনি থেকে আসা যেকোনো প্রশ্নের উত্তর তোমরা সহজেই লিখতে পারবে।

প্রথম পরিচ্ছেদ

বারুণীর দিন গঙ্গায় বিপুল জনসমাগম। বিষ্ণুধরের সঙ্গে ক্ষিতীশের সাক্ষাৎ। বিষ্ণুর ডায়েটিং ও বডি ম্যাসাজ। ক্ষিতীশের মন্তব্য।

কোনি উপন্যাসের প্রথম পরিচ্ছেদের বিষয় সংক্ষেপ প্রথমেই বলে রাখি। আমরা দেখব বারুণীর দিন গঙ্গায় বিপুল জনসমাগম। বিষ্ণুধরের সঙ্গে সেখানেই ক্ষিতীশের সাক্ষাৎ। বিষ্ণুর ডায়েটিং, বডি ম্যাসাজ এগুলো দেখব। আর ক্ষিতীশ-বিষ্ণুর কথোপকথন। এটা আমরা প্রথম পরিচ্ছেদে দেখব।

এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলি উত্তর সংকেত সহ আলোচনা করব। একদম শেষে গোটা কোনি উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ টপিক, অংশ বা প্রশ্নগুলি তোমাদের বলে দেবো।

১. “বিষ্ণুধরের বিরক্তির কারণ হাত পনেরো দূরের একটা লোক” লোকটির পরিচয় দাও। বিষ্ণুধরের বিরক্তির কারণ কী?
সংকেত:

  • লোকটি ক্ষিতীশ সিংহ।
  • বিষ্ণু গঙ্গায় ঘাটে নানান ভঙ্গিমায় মেসেজ করার ছিল। তাকে দেখে ক্ষিতীশ চোখ পিটপিট করে তাকাচ্ছিল আর মুচকি হাসছিল। এই হাসির কারণ বিষ্ণু জানতো। বাচ্চারাও তার বিশাল আকৃতির দেহ দেখে মজা করে, বিষ্ণু তাতে দুঃখ পায়। কিন্তু একটি মাঝ বয়সী লোক হাত পনেরো দূরে দাঁড়িয়ে তাকে দেখে হাসছে, এটাই ছিল বিরক্তির কারণ।

২. “বিষ্ণুধর রাগে কথা বলতে পারছে না, চোখ দিয়ে কামান দাগতে লাগলো।” বিষ্ণুধরের পরিচয় দাও। তার এই আচরণের কারণ লেখ।
সংকেত:

  • বিষ্ণুচরণ ধর, পাড়ায় পরিচিত বেস্টা দা নামে। আই. এ. পাস, বনেদী বংশের, বড়বাজারে মশলার ব্যবসা, ৪০ বছর বয়স, সাড়ে তিন মন ওজনের শরীর।
  • বিষ্ণুধরের বডি মাসাজ দেখে ক্ষিতীশ কৌতুকের সুরে জানতে চান “ম্যাসেজ হচ্ছে নাকি সঙ্গীত চর্চা?”। এছাড়াও তিনি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিষ্ণুর ব্লাড প্রেসার, সুগার, কোলেস্টেরল পরীক্ষা করানোর পাশাপাশি হার্টের অসুখের সম্ভাবনার কথা মনে করিয়ে দেন। এমনকি তিনি বিষ্ণুকে হাতি বা হিপোর সঙ্গে তুলনা করে বসেন। এতেই বিষ্ণুর এই অভিব্যক্তি।

৩. “ম্যাসেজ হচ্ছে নাকি সঙ্গীত চর্চা” – বিষ্ণুর ম্যাসেজের বর্ণনা দাও / বিষ্ণু চরণ ধরের দলাই-মলাই এর বর্ণনা দাও।
সংকেত:

  • মালিশওয়ালা কোমরে হাঁটু চেপে ঘাড় পর্যন্ত মেরুদণ্ড বরাবর ওঠানামা করছিলেন। নমস্কারের ভঙ্গিতে জোড়া তালুর কোদাল চালাচ্ছিলেন। তনপুরা বাজানোর ভঙ্গিতে চর্বিগুলো খামচে ধরে ছাড়ছিলেন। কোমর অবধি তবলা বাজানোর মতো চাট দিচ্ছিলেন এবং হারমোনিয়াম বাজানোর মতো সারেগামা করে মালিশ করছিলেন।

৪. “দৃশ্যটা অনেককে আকৃষ্ট করল” – দৃশ্যটির বর্ণনা দাও।
সংকেত:

  • (২ দাগের প্রশ্নের উত্তরটি)/ ক্ষিতীশের কথায় ক্রুদ্ধ বিষ্ণু বলেন “আপনার মত লোককে চাবকে লাল করা উচিত”। তখন ক্ষিতীশ বলেন যদি তিনি বিষ্ণুকে চাট্টি মারেন, তবে বিষ্ণু তাকে দৌড়ে ধরতে পারবে কিনা। এরপর তিনি জগিং করতে করতে চাট্টি মারার ভঙ্গি করে বিষ্ণুর পাশ দিয়ে বেরিয়ে গিয়ে আবার ফিরে আসেন। এরপর বিষ্ণুর সামনে পেন্ডুলামের মত দুলিয়ে দুলিয়ে ব্যায়াম করতে থাকেন। বিষ্ণু থাবার মত দুটো হাত তুলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান। – এই দৃশ্যটা।

৫. “আপনি আমার থেকে ৪ হাজার গুণ বড়লোক, কিন্তু ৪ লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজের শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না” কে কাকে বলেছে ? কেন বলেছে? // “জোর বলতে শুধু গায়ের জোরই বোঝায় না। মনের জোরে সব হয়” প্রসঙ্গ ও তাৎপর্য লেখ। // “শুধু শরীর গড়লেই হয় না মনকেও গড়তে হয়।”
সংকেত:

  • ক্ষিতীশ বিষ্ণুকে বলেছে।
  • বিষ্ণু আক্ষরিক অর্থেই চিফ ট্রেনার ক্ষিতীশের চেয়ে চার হাজার গুণ বড়লোক। কিন্তু প্রচুর সম্পত্তির মালিক হওয়া সত্ত্বেও বিষ্ণুধর স্বাস্থ্যসচেতন না হওয়ার কারণে দুর্বল, তাছাড়া রয়েছে বিপজ্জনক শারীরিক ওজন। তাই বিষ্ণু সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও ক্ষিতীশ সিংহের হাত ১ ইঞ্চিও নামাতে পারেনি। তখন ক্ষিতীশ জানান, বিষ্ণু নিজের শরীরটাকে চাকর বানাতে পারেন না অর্থাৎ নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। টাকা থাকলেই শরীরকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। শরীরের সঙ্গে যদি ইচ্ছাশক্তি যোগ হয় তাহলে শরীরকে হুকুম দিলে মন কাজ করবে।

৬. বারুণীর দিনের গঙ্গা ঘাটের দৃশ্য।
সংকেত:

  • গঙ্গায় কাঁচা আমের ছোড়াছুড়ি – একদল ছেলেমেয়েরা সেগুলি কুড়িয়ে এনে বিক্রি করছে – স্নান শেষে কাদা মেখে উঠে কেউ কেউ বামুনদের কাছ থেকে তেল নিচ্ছে, কপালে ফোঁটা আঁকছে – পথের দু’ধারে ভিখারিদের কেউ উপেক্ষা করছে – পথের দু’ধারে থাকা দেবালয় ও শিবলিঙ্গে অনেকে জল ঢালছে – রাস্তার দুপাশের বিভিন্ন দোকানের দিকে তাকাতে তাকাতে কেউ কেউ বাজার থেকে ওল, থোড় বা কলম বা লেবু কিনে বাড়ির দিকে ফিরছে।

এই ক’টা প্রশ্ন তোমরা প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে খুব গুরুত্ব দিয়ে পড়ো। আমরা ভালোভাবে অ্যানালাইসিস করলে দেখতে পাই প্রতিবছর প্রথম পরিচ্ছেদ থেকে কিন্তু একটা বড় প্রশ্ন কমন থাকে।

দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

বিষয়: ভেসে আসা আম নিয়ে বালক বালিকাদের লড়াই। সেখানে কোনির লড়াকু মনোভাব ক্ষিতীশের নজরে আসে। ক্ষিতীশের স্ত্রী লীলাবতীর তত্ত্বাবধানে তাদের দোকানের শ্রীবৃদ্ধি।

১. “চার বছরের মধ্যেই প্রজাপতি ডানা মেলে দিয়েছে” – কিভাবে?
সংকেত:

  • ক্ষিতীশ সিংহের টেলারিং দোকানের নাম ছিল সিনহা টেলারিং। ক্ষিতীশের অমনোযোগিতায় দোকানটির অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়ে। বেহাল অবস্থায় দোকানটির দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন লীলাবতী। নিজের গয়না বন্ধক দিয়ে দোকানটিকে ঢেলে সাজান। দোকানটির নাম পরিবর্তন করে রাখেন “প্রজাপতি”। দু বছরের মধ্যেই লীলাবতীর প্রচেষ্টায় দোকানটি উন্নতির শীর্ষে উঠে আসে।

২. “গুরুকে শ্রদ্ধেয় হতে হবে শিষ্যের কাছে” / “চিফ ট্রেনার হওয়া তোর কম্ম নয়” – কে কাকে কেন এই কথা বলেছে?
সংকেত:

  • ক্ষিতীশ হরিচরণকে বলেছে।
  • হরিচরণের ইচ্ছে ছিল চিফ ট্রেনার হওয়ার। সে কথা জানার পর ক্ষিতীশ তাকে উক্তিটি করেছিল। ক্ষিতীশের মতে, গুরুকে শিষ্যের কাছে শ্রদ্ধেয় হতে হবে। শিষ্য যদি গুরুকে সমীহ না করে তবে ট্রেনার হয়ে লাভ নেই। কমনসেন্স প্রয়োগ করে ট্রেনারকে শিষ্যের মনে আকাঙ্ক্ষা বাসনা জাগিয়ে তুলে তাকে মোটিভেট করতে হবে। শুধু চেঁচামেচি বা গালাগালি করে এগুলো সম্ভব নয়।

৩. “ক্ষিদ্দা তোমার এই লেকচার দেওয়ার বদ অভ্যাসটা ছাড়ো” কে কাকে বলেছিল? কেন বলেছিল?
সংকেত:

  • ভেলো ক্ষিতীশ কে বলেছিল।
  • ভেলু জানতে পেরেছিল জুপিটার ক্লাব মিটিংয়ে ডেকে ক্ষিতীশকে অপমান করবে। তাই সে ক্ষিতীশকে সেখানে যেতে নিষেধ করে। ভেলো আরো জানায় হরিচরণ ও তার লোকেরা ক্ষিতীশকে অপদস্থ করতে এই মিটিং ডেকেছে। এটা শুনে ক্ষিতীশ বলে হরিচরণের অনেক দিনের ইচ্ছা চিফ ট্রেনার হওয়ার। এই কথা সে একবার ক্ষিতীশকে জানিয়েছিল। উত্তরে ক্ষিতীশ বলেছিল, চিফ ট্রেনার হওয়া হরিচরণের কর্ম নয়।

৪. প্রথম দিকে লীলাবতী বিদ্রোহী হয়ে উঠেছিল // শরীরের নাম মহাশয় – বিদ্রোহের কারণ লেখ।
সংকেত:

  • ক্ষিতীশ মনে করত বাঙালিয়ানা খাওয়া-দাওয়া তে শরীরের বারোটা বেজে যায়। এই কারণে সে নিজের বাড়িতে শুধুমাত্র সিদ্ধ রান্না করার জন্য স্ত্রীকে নির্দেশ দেন। তেল, বিভিন্ন মসলা, লঙ্কা বাটা ইত্যাদি ব্যবহারের অধিকার হারিয়ে লীলাবতী বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন। স্বামীর সঙ্গে তুমুল ঝগড়া করেন এমনকি তিন দিন না খেয়ে থাকেন। ক্ষিতীশ তবু গোঁয়ারের মত বলতে থাকেন “শরীরের নাম..”। শেষ পর্যন্ত তিনি স্ত্রীকে সপ্তাহে একদিন সরষে আর লঙ্কা বাটা ব্যবহারের অনুমতি দেন।

তৃতীয় পরিচ্ছেদ

বিষয়: ৩৫ বছর জুপিটারের চিফ ট্রেনার থাকার পর, দলাদলি করে তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ এনে তাকে জুপিটার ছাড়তে বাধ্য করা হয়। এমন অবস্থায় ক্ষিতীশ নিজেকে প্রমাণ করার জন্য উপযুক্ত শিষ্যের সন্ধান করতে শুরু করে।

১. আমার বিরুদ্ধে চার্জগুলো স্পষ্ট করে চিঠিতে বলা নেই / ওর বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ উঠেছে সেগুলো তাহলে বলুন / অভিযোগগুলো এনেছে সুইমাররা – জুপিটার ক্লাবে ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছিল? ক্ষিতীশের জবাব কী ছিল।
সংকেত:

  • হরিচরণেরা সমবেতভাবে জানান ছেলেমেয়েদের মন মেজাজ বোঝার ক্ষমতা ক্ষিতীশের নেই। এরপর তারা ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে ক্লাবের সদস্যদের অভিযোগগুলি তুলে ধরেন – শ্যামলের অভিযোগ, গোবিন্দের অভিযোগ, সুহাসের অভিযোগ, অমিয়া ও বেলার অভিযোগ।
  • উত্তরে ক্ষিতীশ জানান, সাঁতারুদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নেই তারা ফাঁকিবাজ। শ্যামল গোবিন্দ সাঁতারের জন্য চাকরি পেলেও সাঁতার কে তারা কিছুই ফেরত দেননি। সাঁতারুরা ডিসিপ্লিনড লাইফ লিড করে না।

২. “টেবিলের মুখগুলো উজ্জ্বল হয়ে উঠল” – কেন?
সংকেত:

  • পৃথিবীর সব অভিযোগ স্বীকার করে নিলে, প্রতিপক্ষের কার্যসিদ্ধি হয় ফলে সকলের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।

(এই উত্তরটা লেখার আগে আগের প্রশ্নের উত্তরটা লিখতে হবে। অর্থাৎ ক্ষিতীশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলো ক্ষিতীশ যখন সব স্বীকার করে নেয়, তখন তার প্রতিপক্ষরা ভাবে তাদের কার্যসিদ্ধি হয়েছে এবং তাই তাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।)

বিভিন্ন চরিত্র আলোচনা
এবার আমরা চরিত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করব।

ক্ষিতীশ সিংহ: স্বাস্থ্য সচেতন – জহুরী দৃষ্টি – আদর্শ গুরু – স্পষ্টবাদী – জেদি – উপস্থিত বুদ্ধির অধিকারী – চরিত্রের নেতিবাচক দিক। (নেতিবাচক দিক বলতে লিখতে হবে যে, আদর্শ থাকা সত্ত্বেও সে অন্যায়ের আশ্রয় নেয়, বিনা টিকিটে রেলযাত্রা করে।)

কোনি চরিত্র: সম্পূর্ণ নাম কনকচাঁপা পাল। অনমনীয় জেদ – পরিশ্রমী – আত্মমর্যাদা বোধ – সংসারের প্রতি ভালোবাসা – গুরুর প্রতি ভালোবাসা/সম্মান।

লীলাবতী চরিত্র: ব্যবসায়িক বুদ্ধি সম্পন্না – স্বামীর যোগ্য সহধর্মিণী – ভোজন রসিক – শাস্ত্র মেনে চলার পক্ষপাতী – কাঠিন্যের আড়ালে কোমল।

প্রণবেন্দু বিশ্বাস: অভিজ্ঞ ও দক্ষ প্রশিক্ষক – বিচক্ষণ – নিরপেক্ষ ও যুক্তিবাদী – বঙ্গ প্রেমিক।

বিষ্ণুচরণ ধর: ভোজন রসিক – আরামপ্রিয় – পরিশ্রমে অনিহা – সরল ও মজার – রাজনৈতিক উচ্চাশা – সম্মান কেনার প্রবণতা- বুদ্ধিহীন।

ফাইনাল সাজেশন

সাজেশন এটাই। দেখো “কোনি” থেকে যে যাই বলুক প্রতিবছর লাইন কিন্তু আনকমন লাইন তুলেই প্রশ্ন হচ্ছে। এজন্য রিস্ক না নিয়ে অনুচ্ছেদ এক, তিন, পাঁচ, সাত, নয়, দ্বাদশ – এই ক’টা পরিচ্ছেদ তোমরা ভালোভাবে পড়ে নাও। দেখো মোট ১৪টা পরিচ্ছেদ আছে। শত শত লাইন গুরুত্বপূর্ণ। তার মধ্যে থেকে বিশেষ করে এক, তিন, পাঁচ এই কটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। যে কটা লেখা এই কটা তোমরা অবশ্যই কোনি বই থেকে ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ো।

এছাড়া বিশেষভাবে নজরে রাখবে:

  • কোনির জীবনে ক্ষিতীশের অবদান
  • কম্পিটিশনে পড়লে মেয়েটা তো আমার পা ধোয়া জল খাবে
  • তোর আসল লজ্জা জলে গর্বও জলে
  • বাংলা সাঁতার দলে কোনির অন্তর্ভুক্তি
  • জাতীয় সাঁতারের শেষ দিনের ঘটনা
  • এটাকে বুকের মধ্যে পুষে রাখুক
  • ফাইট কোনি ফাইট
  • কোনির দাদা কমলের হতাশার অংশ (সপ্তম পরিচ্ছেদে)

যাইহোক, নিরাশার সমুদ্রে তোমাদের ডোবাতে চাই না। এটুকুই বলবো এখনো তো সময় আছে, একটু মন দিয়ে পড়ো। আমার বিশ্বাস কোনির ভয়কেও তোমরা জয় করতে পারবে।

প্রথম প্রশ্ন:
কোনি কী ধরনের রচনা?
উত্তর: এটি উপন্যাসধর্মী রচনা।

২. ‘কোনি’ উপন্যাসটি কার লেখা?
উত্তর: মতি নন্দীর লেখা।

৩. লেখক মতি নন্দীর জন্ম সাল উল্লেখ করো।
উত্তর: ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দ।

৪. মতি নন্দীর জন্মস্থান লেখো।
উত্তর: উত্তর কলকাতা।

৫. মতি নন্দীর প্রথম গল্প কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়?
উত্তর: ১৯৫৭ সালে ‘দেশ’ পত্রিকায়।

৬. মতি নন্দীর ‘বেহুলার ভেলা’ গল্পটি কত খ্রিস্টাব্দে কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল?
উত্তর: ১৯৫৮ সালের ‘শারদীয় পরিচয়’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

৭. মতি নন্দীর লেখন বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো।
উত্তর: নিজস্ব ভাষাভঙ্গি, তীব্র বিদ্রূপ এবং অবিস্মরণীয় শিল্পদৃষ্টি তাঁর রচনার প্রধান বৈশিষ্ট্য।

৮. মতি নন্দী রচিত শিশু-কিশোরদের জন্য লেখা জনপ্রিয় গ্রন্থগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর: ‘স্ট্রাইকার’, ‘স্টপার’, ‘কোনি’, ‘ননীদা নট আউট’, ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’, ‘সাদা খাম’, ‘দলবদলের আগে’, ‘দ্বিতীয় ইনিংসের পর’, ‘স্ট্রোক’, ‘অশ্বমেধের ঘোড়া’, ‘ছায়া’, ‘অপরাজিত আনন্দ’, ‘কলাবতী’, ‘শিবা প্রভৃতি।

৯. মতি নন্দী কত খ্রিস্টাব্দে আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দে।

১০. কত খ্রিস্টাব্দে মতি নন্দী সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন?
উত্তর: ‘সাদা খাম’ উপন্যাসের জন্য ১৯৯১ সালে সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।

১১. লেখক মতি নন্দী শিশু কিশোর সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য কোন পুরস্কার পান?
উত্তর: বাংলা আকাদেমি পুরস্কার (২০০০ খ্রিস্টাব্দ)।

১২. লেখকের পাশাপাশি মতি নন্দীর অন্য পরিচয় কী?
উত্তর: বিশিষ্ট ক্রীড়া সাংবাদিক।

১৩. ‘কোনি’ উপন্যাসটিতে কী ধরনের কাহিনী স্থান পেয়েছে?
উত্তর: কোনি নামক এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত মেয়ের কাহিনী স্থান পেয়েছে।

১৪. ‘কোনি’ উপন্যাসটি মোট কয়টি পরিচ্ছেদে বিভক্ত?
উত্তর: ১৪টি।

১৫. কোন দিনের ঘটনা দিয়ে ‘কোনি’ উপন্যাসটি শুরু হয়েছে?
উত্তর: বারুণীর দিনের ঘটনা।

১৬. বারুণী কী?
উত্তর: বারুণী হিন্দুদের একটি ধর্মীয় উৎসব। যে দিনে গঙ্গায় পুজো দিয়ে দেবতাদের উদ্দেশ্যে কাঁচা আম উৎসর্গ করা হয়।

১৭. বারুণীর দিনে গঙ্গায় কিসের ছোড়াছুড়ি লক্ষ্য করা যায়?
উত্তর: কাঁচা আমের।

১৮. বারুণীর দিনে ঘাটে কাদের ভিড়টা বেশি চোখে পড়ে?
উত্তর: বয়স্কদের।

১৯. ‘ডুব দিয়ে উঠেই ফেলে দিচ্ছে।’ – কিসের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: সদ্য ওঠা কাঁচা আম।

২০. ছোট ছোট দলে ছেলেরা জলে অপেক্ষা করছে কেন?
উত্তর: আম সংগ্রহের জন্য।

২১. নদীতে যারা আম কুড়িয়ে পায় তারা কোথায় রেখে দেয়?
উত্তর: প্যান্টের পকেটে।

২২. পকেটটা আমে ভরে গিয়ে ফুলে উঠলে তারা কোথায় রেখে আসে?
উত্তর: ঘাটের কোথাও।

২৩. কিসে হাত দেওয়ার কারো সাধ্য নেই?
উত্তর: ঘাটে রেখে আসা আমে হাত দেওয়ার কারো সাধ্য নেই।

২৪. ঘাটে কুড়ানো আম গুলি তারা কোথায় বিক্রি করে?
উত্তর: পথের ধারে বসা বাজারে অনেক কম দামে বিক্রি করে।

২৫. বারুণীর দিনে গঙ্গায় জলের অবস্থা কেমন ছিল?
উত্তর: গঙ্গায় ভাটা ছিল।

২৬. স্নান করে বিরক্ত মুখে উঠে আসতে হচ্ছে কেন?
উত্তর: কাদা মাড়িয়ে আসতে হচ্ছে তাই।

২৭. ঘাটের মাথায় বামুনরা কোন দিকে মুখ করে বসে থাকে?
উত্তর: ট্রেন লাইনের দিকে।

২৮. কারা পয়সা নিয়ে জামা কাপড় রাখে, গায়ে মাথায় সরষে বা নারকোল তেল দেয় এবং কপালে চন্দনের ছাপ আঁকে?
উত্তর: ট্রেন লাইনের দিকে মুখ করে বসা বামুনরা।

২৯. গঙ্গার ঘাটে স্নান সেরে মানুষের ঘরে ফেরার বর্ণনা দাও।
উত্তর: রাস্তার ধারের দেবদেবীদের দুয়ারে কিংবা শিবলিঙ্গের মাথায় ঘটি থেকে গঙ্গাজল দিয়ে, কাঠের, প্লাস্টিকের, লোহার, খেলনার ও সাংসারিক সামগ্রীর দোকানগুলির দিকে কৌতূহলী চোখ রেখে কেউ বা ওল কিংবা কমলালেবু ধরনের কিছু কিনে বাড়ি ফেরে।

৩০. রোদে তেতে ওঠা রাস্তায় খালি পা দ্রুত ফেলে তারা কিভাবে বাড়ি পৌঁছাবে?
উত্তর: বিরক্ত মেজাজে।

৩১. তেল চিটচিটে একটা ছেঁড়া মাদুরে উপুড় হয়ে কে বিরক্ত মুখে গঙ্গার দিকে তাকিয়ে আছে?
উত্তর: বিষ্ণুচরণ ধর।

৩২. বিষ্ণুচরণ ধর ছেঁড়া মাদুরে উপুর হয়ে শুয়ে কী করছিলেন?
উত্তর: শরীরকে দলাই-মলাই করাচ্ছিল।

৩৩. বিষ্ণুচরণ ধর পাড়ায় কী নামে পরিচিত?
উত্তর: বেস্টাদা।

৩৪. বিষ্ণুধরের শিক্ষাগত যোগ্যতা লেখ।
উত্তর: আই.এ. পাশ।

৩৫. বিষ্ণু ধর কেমন বংশের সন্তান?
উত্তর: অত্যন্ত বনেদি বংশের সন্তান।

৩৬. বিষ্ণুচরণ ধর কয়টি বাড়ির মালিক?
উত্তর: সাতটি।

৩৭. বড়োবাজারে বিষ্ণু ধরের কিসের কারবার রয়েছে?
উত্তর: ঝাড়ন মশলার কারবার।

৩৮. বিষ্ণুচরণ ধরের ওজন কত?
উত্তর: তিন মণ।

৩৯. বিষ্ণুচরণ ধরের বয়স কত?
উত্তর: ৪০ বছর।

৪০. কে বিষ্ণুধরকে সর্বত্র বহন করে?
উত্তর: তার সমবয়সী চল্লিশ বছরের একটি বিশ্বস্ত অস্টিন।

৪১. ‘অস্টিন’ কী?
উত্তর: এক ধরনের গাড়ি।

৪২. বিষ্ণু ধরের বিরক্তির কারণ কী ছিল?
উত্তর: হাত পনেরো দূরের একটা লোক।

৪৩. বিষ্ণু ধরের হাত পনেরো দূরের লোকটার পোশাকের বর্ণনা দাও।
উত্তর: পরনে সাদা লুঙ্গি আর গেরুয়া পাঞ্জাবি, কাঁধে রঙিন ঝোলা।

৪৪. ‘তার দিকে পিটপিট করে তাকাচ্ছে আর মাঝে মাঝে মুচকি হাসছে।’ কার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: গঙ্গার ঘাটে মাদুরের ওপরে শুয়ে থাকা বিষ্ণুধরের থেকে হাত পনেরো দূরের একটি লোকের কথা বলা হয়েছে।

৪৫. ‘বিষ্ণু বুঝতে পেরেছে’ – বিষ্ণু কী বুঝতে পেরেছে?
উত্তর: দূরের লোকটা তার দেহের আয়তন দেখে হাসছে।

৪৬. ‘বিষ্ণু তখন দুঃখ পায়।’ – বিষ্ণু কখন দুঃখ পায়?
উত্তর: তার দেহের আয়তন দেখে দূরের লোকটি যখন হাসছিল।

৪৭. দুঃখ পেয়ে বিষ্ণুর মনে কোন ইচ্ছা প্রকাশ পায়?
উত্তর: তার ছিপছিপে হতে ইচ্ছা করে।

৪৮. ‘কিন্তু বিষ্ণু বিরক্ত হচ্ছে’ – এক্ষেত্রে বিষ্ণুর বিরক্ত হওয়ার কারণটি কী?
উত্তর: দূরের লোকটি বাচ্চা না হয়েও বাচ্চাদের মতো হাসছে।

৪৯. ‘এরকম হাসি বাচ্চা ছেলেরাও হাসে’ – কার হাসির কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: নদীর ঘাটে বিষ্ণুধরের চেহারা দেখে যে লোকটি হাসছিলেন তার হাসির কথা বলা হয়েছে।

৫০. নদীর ঘাটে বিষ্ণুচরণ ধরকে দেখে যে লোকটি হাসছিলেন তার চেহারার বিবরণ দাও।
উত্তর: চোখে পুরু লেন্সের চশমা। নুন আর গোলমরিচের গুঁড়ো মেশালে যেমন দেখায়, তার কদম ছাঁট চুল সেই রঙের। বয়সটা পঞ্চাশের এধারে বা ওধারে বছর পাঁচেকের মধ্যে হতে পারে। লোকটার গায়ের রং ধুলোমাখা পোড়া মাটির মতো; আর চোখের চাহনি! ধূসর মণি দুটো দেখলে মনে হয় সূর্যের দিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে তাকিয়ে থেকে মণির রংটা ফিকে হয়ে গেছে।

৫১. ‘চাহনিটা এমন’ – লোকটার চাহনি দেখলে কী মনে হয়?
উত্তর: দেখলে মনে হয় যেন তার মনের সঙ্গে মেলে না সেই সব ব্যাপার গুলো ব্লোটর্চের মতো পুড়িয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকে যাবে।

৫২. ‘ব্লোটর্চ’ কী?
উত্তর: আগুন নিক্ষেপকারী টর্চ।

৫৩. লোকটির চোয়াল দুটোকে কী শক্ত করে রেখেছে?
উত্তর: জেদ।

৫৪. মালিশওয়ালা ডান হাঁটুটা বিষ্ণু ধরের কোমরে চেপে ধরে, মেরুদণ্ড বরাবর ঘাড় পর্যন্ত কেমন ভাবে ওঠানামা করতে লাগলেন?
উত্তর: পিস্টনের মতো।

৫৫. ‘পিস্টন’ কী?
উত্তর: এক ধরনের যান্ত্রিক হাতল।

৫৬. মালিশ ওয়ালা কতবার পিস্টনের মতো বিষ্ণুধরের পিঠে ওঠানামা করালেন?
উত্তর: দশ বার।

৫৭. মালিশ ওয়ালা নমস্কারের ভঙ্গিতে হাতের তালু জোড়া করে বিষ্ণুধরের পিঠে কী চালিয়েছিল?
উত্তর: কোদাল।

৫৮. ‘সে অভীষ্ট লাভ করল।’ – কে কোন অভীষ্ট লাভ করেছিল?
উত্তর: বিষ্ণুধর চিৎ হওয়ার চেষ্টা করে যখন পারছিল না, তখন মালিশওয়ালা ঠেলে গড়িয়ে দিতেই তার অভীষ্ট লাভ হল অর্থাৎ ইচ্ছা পূরণ হল।

৫৯. ‘তবলা বাজা।’ – কে কাকে এ কথা বলেছে?
উত্তর: বিষ্ণুধর মালিশ ওয়ালাকে এ কথা বলেছে।

৬০. ‘চোখ বুজে প্রবল আরামে নিঃশ্বাস ফেলতে গিয়ে তার মনে হল’ – কার কী মনে হয়েছিল?
উত্তর: বিষ্ণুধরের মনে হয়েছিল দূরে দাঁড়িয়ে থাকা সেই লোকটি হয়তো ফ্যাকাফিক করে হাসছে।

৬১. ‘বিষ্ণু তখন খুবই বিরক্ত বোধ করে বলল’ – বিষ্ণু বিরক্ত বোধ করে কী বলল?
উত্তর: ‘সারেগামা কর’।

৬২. মালিশ ওয়ালা নির্দেশ পেয়ে আঙ্গুলগুলো কেমন ভাবে বিষ্ণুর সর্বাঙ্গে বাজাতে লাগলো?
উত্তর: হারমোনিয়াম এর মতো।

৬৩. ‘অ্যাঁ! এতে হাসির কী আছে?’ – বক্তা কে?
উত্তর: বিষ্ণুচরণ ধর।

৬৪. ‘ম্যাসেজ হচ্ছে না সংগীত চর্চা হচ্ছে?’ – কত সেকেন্ড পরে বিষ্ণুধর এই জবাব শুনতে পেল?
উত্তর: কুড়ি সেকেন্ড।

৬৫. ‘ব্লাড সুগার পরীক্ষা করিয়েছেন? কোলেস্টেরল লেভেলটাও দেখেছেন কি?’ – বক্তা কে?
উত্তর: নদীর ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি (ক্ষিতীশ সিংহ)।

৬৬. ‘কে মশাই আপনি, গায়ে পড়ে এত কথা বলছেন। চান করতে এসেছেন, করে চলে যান।’ – কে কাকে কথা বলেছে?
উত্তর: বিষ্ণুধর ক্ষিতীশ সিংহকে এ কথা বলেছেন।

৬৭. ‘তবে আপনার হার্টটা বোধহয় আর বেশিদিন এই গন্ধমাদন টানতে পারবে না।’ – গন্ধমাদন বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: বিষ্ণুধরের চেহারাকে বোঝানো হয়েছে।

৬৮. “অবশ্য হাতি কিংবা হিপোর কখনো করোনারি অ্যাটাক হয়েছে বলে শুনিনি, সুতরাং আমি হয়তো ভুলও বলতে পারি।” – বক্তা ক্ষিতীশ সিংহ কাকে উদ্দেশ্য করে এই কথাটি বলেছেন?
উত্তর: বিষ্ণুধরকে উদ্দেশ্য করে।

৬৯. ‘শুধু চোখ দিয়ে কামান দাগতে লাগলো।’ – কে কখন চোখ দিয়ে কামান দাগতে লেগেছিল?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ যখন বিষ্ণুচরণ ধরকে হাতি আর হিপোর সাথে তুলনা করেছিলেন।

৭০. ‘আপনাকে যে কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা’ – বক্তা কে?
উত্তর: বিষ্ণুধর।

৭১. ‘আমার বউ ঠিক এই কথাই বলে।’ – কার বউ কোন কথা বলে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহের বউ ‘আপনাকে যে কি বলব ভেবে পাচ্ছিনা’ এই কথা বলে।

৭২. ‘আপনি একটা নুইসেন্স।’ – বক্তা কে?
উত্তর: বিষ্ণুচরণ ধর।

৭৩. বিষ্ণুচরণ ধরের উক্ত কথার উত্তরে ক্ষিতীশ সিংহ কী জানিয়েছেন?
উত্তর: তার ক্লাবের অনেকেই এ কথা বলে।

৭৪. ‘নুইসেন্স’ – অর্থ কী?
উত্তর: বোকা।

৭৫. ‘আপনার মতো লোককে চাবকে লাল করা উচিত।’ – কে কাকে কথা বলেছেন?
উত্তর: বিষ্ণুচরণ ধর ক্ষিতীশ সিংহকে এ কথা বলেছেন।

৭৬. ‘আচ্ছা আমি যদি আপনার মাথায় চাঁটি মারি আপনি দৌড়ে আমায় ধরতে পারবেন?’ – বক্তা কে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ।

৭৭. ‘বিষ্ণু হতভম্ব হয়ে লোকটির জগ করা দেখতে লাগলো।’ – বিষ্ণু কার জগ করা দেখতে লাগলো?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহের।

৭৮. ‘পারবেন ধরতে যদি চাঁটিয়ে যাই? আমার কিন্তু আপনার থেকে অনেক বয়স।’ – বক্তা কে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ।

৭৯. ‘তাতেই লোকটি দাঁড়িয়ে পড়ল।’ – লোকটি অর্থাৎ ক্ষিতীশ সিংহের দাঁড়িয়ে পড়ার কারণ কী?
উত্তর: বিষ্ণুধরের বুনো মোষের মতো তেড়ে আসা।

৮০. তারপর নাচের ভঙ্গিতে শরীরটাকে পেন্ডুলামের মতো ডাইনে এবং বামে দুলিয়ে তিড়িং তিড়িং লাফালাফি শুরু করল।” – ‘পেন্ডুলাম’ কী?
উত্তর: পেন্ডুলাম হল একটি যান্ত্রিক বিন্যাস। যা একটি বিন্দু থেকে মধ্যাকর্ষণের প্রভাবে সামনে পিছনে শরীরকে দোলাতে পারে।

৮১. ‘দৃশ্যটা অনেককে আকৃষ্ট করল।’ – কোন দৃশ্যের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ নাচের ভঙ্গিতে শরীরকে পেন্ডুলামের মতো ডাইনে বামে দুলিয়ে তিড়িং তিড়িং লাফালাফি করছে আর বিষ্ণু থাবার মতো দুটো হাত তুলে অপেক্ষা করছে। এই দৃশ্যটা অনেককে আকৃষ্ট করেছিল।

৮২. “আমি রোজ এক্সারসাইজ করি। আইসোমেট্রিক, ক্যালিসথেনিক, বারবেল, বুঝলেন রোজ করি। দারুন খিদে পায়। আপনার পায়?” – কে কাকে কথা বলেছেন?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্ণুচরণ ধরকে এ কথা বলেছেন।

৮৩. বিষ্ণু ধর কথা না বলে মুখ দিয়ে কেমন শব্দ করেছিল?
উত্তর: ঘোঁৎ।

৮৪. জগিং কী?
উত্তর: শরীর চর্চার উদ্দেশ্যে দৌড়ানো।

৮৫. আইসোমেট্রিক কী?
উত্তর: সমপরিমাণ বিশিষ্ট ব্যায়ামের প্রকারভেদ।

৮৬. ক্যালিসথেনিক কী?
উত্তর: শক্তি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যায়াম।

৮৭. বারবেল কী?
উত্তর: ব্যায়াম করার দণ্ডবিশেষ, যার উভয় পাশে ওজন থাকে।

৮৮. ‘খিদের মুখে যা পাই তাই অমৃতের মতো লাগে। এই সুখ আপনার আছে?’ – কে কাকে বলেছেন?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্ণু ধরকে বলেছেন।

৮৯. সিঁড়ি দিয়ে কতবার ওঠানামা করার পরে ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্ণু ধরের পাঁচ গজ তফাতে দাঁড়িয়ে হাঁপাতে লাগলো?
উত্তর: তিনবার।

৯০. ‘ওর চোখে এখন রাগের বদলে কৌতূহল।’ – কার চোখে?
উত্তর: বিষ্ণু ধরের চোখে।

৯১. কৌতূহলটা কিসের?
উত্তর: নিজের স্থূল শরীরের সাথে ক্ষিতীশ সিংহের ছিপছিপে শরীরের বদলের কৌতূহল।

৯২. ‘ভারিক্কি চালে বিষ্ণুধর ঘোষণা করল এবং গলার স্বরে বোঝা গেল এর জন্য সে গর্বিত।’ – বিষ্ণুধর ভারিক্কি চালে কী ঘোষণা করলো?
উত্তর: খাওয়ায় আমার লোভ নেই। ডায়েটিং করি।’

৯৩. ‘কী রকম ডায়েটিং!’ – বক্তা কে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ।

৯৪. বিষ্ণুধর আগে রোজ কতটা ক্ষীর খেতেন?
উত্তর: আধ কিলো।

৯৫. বিষ্ণুধর এখন কতটা ক্ষীর খান?
উত্তর: তিনশো গ্রাম।

৯৬. বিষ্ণুধর আগে জলখাবারের সঙ্গে কতগুলি লুচি খেতেন?
উত্তর: কুড়িটা।

৯৭. এখন কয়টা লুচি খান?
উত্তর: পনেরোটা।

৯৮. বিষ্ণুধর কতটা চালের ভাত খান?
উত্তর: আড়াইশো গ্রাম।

৯৯. রাতে কয়টি রুটি খান?
উত্তর: বারোটা।

১০০. গরম ভাতের সঙ্গে বিষ্ণুচরণ ধর কত চামচ ঘি খান?
উত্তর: চার চামচ।

১০১. বিষ্ণুধরের বিকেলের খাবারের তালিকায় কী কী থাকে?
উত্তর: দু গ্লাস মিছরির শরবত আর চারটে কড়া পাক।

১০২. বিষ্ণু ধরের মাংস-মাছ না খাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: তার বাড়িতে রাধাগোবিন্দের বিগ্রহ আছে।

১০৩. বিষ্ণুধর সপ্তাহে কয়দিন গঙ্গার ঘাটে এসে ম্যাসেজ করান?
উত্তর: একদিন।

১০৪. “আমার অত নোলা নেই, বুঝলেন সংযম কৃচ্ছ্রসাধন আমি পারি। হার্টের ব্যামো ফ্যামো আমার হবে না, বংশের কারো হয়নি।” – বক্তা কে?
উত্তর: বিষ্ণুচরণ ধর।

১০৫. বিষ্ণুধরের বাবা কতগুলি ফুলুরি খেয়ে কলেরায় মারা গেছেন?
উত্তর: সত্তরটি।

১০৬. বিষ্ণুধরের জ্যাঠা কোন অসুখে মারা গেছেন?
উত্তর: অম্বলে।

১০৭. “এত কেচ্ছসাধন করেন! বাঁচবেন কী করে?” – বক্তা ক্ষিতীশ সিংহ কার উদ্দেশ্যে উক্তিটি করেছেন?
উত্তর: বিষ্ণুধরের উদ্দেশ্যে।

১০৮. ‘কেচ্ছসাধন’ – বলতে কী বোঝ?
উত্তর: কৃচ্ছ্রসাধন অর্থাৎ ভোগ ত্যাগ করা বা সংযমকে বোঝানো হয়েছে।

১০৯. ক্ষিতীশ সিংহ বিষ্ণু ধরের কোথায় সুড়সুড়ি দিয়েছিল?
উত্তর: ভুঁড়িতে।

১১০. ‘আমার বউ ওই কথা বলে।’ – বিষ্ণু ধরের বউ কোন কথা বলে?
উত্তর: সকাল থেকে রাত অবধি খাটুনি করে সামান্য খাবার খেয়ে বিষ্ণুধর কি করে বাঁচবে।

১১১. বিষ্ণুধর কিসের কারবার করেন?
উত্তর: সরষে, চিনি, ডাল প্রভৃতি জিনিসের কারবার করেন।

১১২. বিষ্ণুধর ক্ষিতীশ সিংহের কোন কথায় অপমান বোধ করেছেন?
উত্তর: হাতি-হিপো বলা শুনে অপমান বোধ করেছিল।

১১৩. ‘আমি কি অশিক্ষিত?’ – বক্তা কে?
উত্তর: বিষ্ণুধর।

১১৪. ‘আপনার ওজনটা খুব বিপজ্জনক হার্টের পক্ষে।’ – বক্তা কে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ।

১১৫. ‘কিন্তু গলা দিয়ে বেরিয়ে এল ভয়ার্ত স্বর আমি কি মরে যেতে পারি!’ – বিষ্ণুধর কোন কথা শুনে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন?
উত্তর: ‘আপনার ওজনটা খুব বিপজ্জনক হার্টের পক্ষে’ ক্ষিতীশ সিংহের বলা এই কথাটি শুনে বিষ্ণুধর আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

১১৬. “আপনি আমার থেকে চার হাজার গুণ বড়লোক, কিন্তু চার লক্ষ টাকা খরচ করেও আপনি নিজে শরীরটাকে চাকর বানাতে পারবেন না।” – শরীরকে চাকর বানানো বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: মন যা বলবে শরীর সেটাই শুনবে।

১১৭. ‘বিষ্ণু এবার সর্বশক্তি প্রয়োগ করল।’ – কেন?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহের কনুইটাকে নিচে নামানোর জন্য।

১১৮. ‘তাদের চোখে বিস্ময়, লোকটার সাফল্যে না বিষ্ণুর ব্যর্থতায় বোঝা যাচ্ছে না।’ – কাদের কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: ঘাটে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের কথা বলা হয়েছে।

১১৯. ‘বিষ্ণু হাল ছেড়ে দিয়ে ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলো।’ – কখন বিষ্ণুর এমন অবস্থা হয়েছিল?
উত্তর: যখন বিষ্ণুধর ক্ষিতীশ সিংহের কনুইটাকে নিচে নামানোর ক্ষেত্রে ব্যর্থ হন।

১২০. ক্ষিতীশ সিংহ জোর বলতে কী বোঝেন?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহের মতে জোর মানে শুধু গায়ের জোর নয়, মনের জোর বা ইচ্ছা শক্তিকে বোঝায়।

১২১. কিসের দ্বারা শরীরের দুর্বলতা ঢাকা দেওয়া যায়?
উত্তর: ইচ্ছা শক্তির দ্বারা।

১২২. ক্ষিতীশ সিংহের মতে ইচ্ছার জোরের ক্ষমতা কতটা?
উত্তর: শরীর যতটা করতে পারবে ভাবে, তার থেকেও শরীরকে দিয়ে বেশি করাতে পারে ইচ্ছার জোর।

১২৩. ‘সেজন্য শুধু শরীর গড়লেই হয় না, মন কেট গড়তে হয়। শরীরকে হুকুম দিয়ে মন কাজ করাবে।’ – বক্তা কে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ।

১২৪. “আপনার মন হুকুম করতে জানেনা তাই শরীর পালন করল না।” – কে কাকে একথা জানিয়েছে?
উত্তর: বিষ্ণুচরণ ধরকে ক্ষিতীশ সিংহ এ কথা জানিয়েছে।

১২৫. ‘বিষ্ণুধর বিষণ্ণ চোখে তাকিয়ে থেকে বিড়বিড় করে বলল।’ – কী বলল?
উত্তর: “ইচ্ছে করে খুব রোগা হয়ে যাই।”

১২৬. ঠিক এই সময় গঙ্গার তীর থেকে তীক্ষ্ণ স্বরে কোন নামটি ভেসে এলো?
উত্তর: কো ও ও নি ই ই ই।

১২৭. ‘লোকটি গঙ্গার দিকে তাকাল।’ – লোকটি কে?
উত্তর: ক্ষিতীশ সিংহ।

১২৮. লোকটির গঙ্গার দিকে তাকানোর কারণ কী?
উত্তর: গঙ্গার তীর থেকে তীক্ষ্ণ স্বরে ভেসে আসা কোনি নামটি শুনে লোকটি গঙ্গার দিকে তাকাল।

প্রশ্ন ১: মতি নন্দীর কোনি উপন্যাসে কোনির চরিত্র আলোচনা কর।

উত্তর:
বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মতি নন্দীর ‘কোনি’ নামক কিশোর উপন্যাসের প্রধান চরিত্র কোনি। লেখক তার সাহিত্যিক ভাবনায় রূপকের মাধ্যমে এই উপন্যাসের গল্পটিকে আমাদের সামনে তুলে ধরেছেন। কোনি উপন্যাসের সমগ্র অংশ জুড়ে আছে কোনির জীবনের উত্থান-পতন, জয়-পরাজয়, ক্রিয়াশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, জেদি মনোভাব, ক্লাবের সদস্যদের ষড়যন্ত্র, অবশেষে বাংলার সাঁতারের দলে স্থান এবং লক্ষ্যে পৌঁছানো।

  • কঠোর জীবনসংগ্রাম: কোনির পুরো নাম কনকচাঁপা পাল। কলকাতার শ্যাম-পুকুর বস্তিতে মা ও সাত ভাইবোনের সঙ্গে বাস করে কোনি। সে অতি দরিদ্র পীড়িত পরিবারের মেয়ে, চেহারা ছেলেদের মত-মেয়েমদ্দানি। কোন কিছুতেই সে ভয় পেয়ে পিছিয়ে যায় না। সে অবিরাম ২০ ঘন্টার ভ্রমণ প্রতিযোগিতা হোক বা গঙ্গায় সাঁতরে আমের দখল নেওয়াই হোক বা নামকরা সাঁতারু-দের সঙ্গে সাঁতার প্রতিযোগিতায় হোক সবেতেই সে এগিয়ে থাকে।
  • পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধতা: দাদা কমলের মৃত্যুর পর পরিবারের সকলের খাবার জোগানোর জন্য যখন সে প্রজাপতি টেলার্নিং শপে কাজ করে তখন দেখা যায় হাড়ভাঙা কঠোর ট্রেনিং এর পর শত কষ্ট হলেও ছুটে যায় প্রজাপতিতে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে বলেই ক্ষিতীশ তার জন্য দুধ, ডিম, কলা ও মধুর জন্য যে টাকা বরাদ্দ করেছিল সেই টাকায় নিজে না খেয়ে পরিবারের জন্য বাড়ী নিয়ে যেতে চায়, যাতে তা দিয়ে বাড়ীর সবার খাবারের জন্য চাল কিনতে পারে।
  • প্রখর আত্মসম্মানবোধ: কোনির আত্মসম্মানবোধ প্রখর। চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে বড় স্কুলের দিদিমনির কাছ থেকে জল চেয়ে না পেলে সে প্রতিহিংসায় জ্বলে ওঠে। সেই জল যখন ঐ স্কুলের ছাত্রী হিয়া মিত্র দিতে আসে তখন সে প্রবল অপমানে সেই জলকে দূরে ছুঁড়ে ফেলে দেয়।
  • কঠোর পরিশ্রমী: কোনির সৎসাহস, কঠোর পরিশ্রম, কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা, জমে থাকা দুঃখ, অভিমান শেষ পর্যন্ত তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে সাহায্য করেছিল। অবশেষে মাদ্রাজে ভারতের সেরা মহিলা সাঁতারু মহারাষ্ট্রের রমা যোশিকে হারিয়ে স্বর্ণপদক লাভ করে ক্ষিতীশ ও বাংলার সম্মান রক্ষা করেছিল।
  • চারিত্রিক দৃঢ়তা: জন্মলগ্ন থেকেই কোনি ছিল দৃঢ় চরিত্রের অধিকারী। গঙ্গায় সাঁতরে ছেলেদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমকুড়োনো, চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে হিয়া মিত্রের হাত থেকে জল ফেলে দেওয়া,- এসব কিছুর মধ্যেই তার চারিত্রিক দৃঢ়তা প্রকাশ পায়।
  • একগুঁয়ে জেদি মানসিকতা: তার একগুঁয়ে জেদি মানসিকতায় তার প্রতিভার স্ফুরণ ঘটানোর প্রধান অবলম্বন ছিল। জীবনের প্রথম সাঁতার প্রতিযোগিতায় কমলদিঘিতে হিয়া মিত্রের কাছে হেরে যাওয়ায়, সে হিয়াকে চড় মারতে তার হাত একটুকুও কাঁপেনি। এমন কি তার এই একগুঁয়ে জেদকে সাঁতারের ট্রেনিং-এ কাজে লাগিয়ে ক্ষিতীশ কোনিকে নিয়ে গেছে সাফল্যের চূড়ায়।
  • ক্ষিতীশের সঙ্গে বোঝাপড়া: কোনির জীবনে ক্ষিতীশ দেবদূতের মত এসে হাজির হয়েছে। কোনিকে পেয়েই একদিকে ক্ষিতীশের জীবনের মোড় ঘুরে গেছে। তারা একে অপরকে অবলম্বন করেই উভয়েই সাফল্যের মুখ দেখেছে। সমালোচনা, অপমান ও ব্যঙ্গ-বিদ্রুপকারীদের মুখে চুন-কালি মাখিয়ে দিয়েছে।
  • জয় ও খ্যাতি: কঠোর পরিশ্রম, চেষ্টা, অধ্যবসায়, কর্মই যে সাফল্যের চাবিকাঠি-এই চিরন্তন সত্যকে সুপ্রতিষ্ঠার জন্যই শেষ পর্যন্ত ভাগ্য তাকে অপ্রত্যাশিতভাবে সুযোগ এনে দেয়। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোনি মাদ্রাজে সাঁতারে স্বর্ণপদক জয়লাভ করে খ্যাতি অর্জন করে।

মূল্যায়ন:
কোনি চরিত্র হল লেখকের কল্পনার ভূমিকায় অঙ্কিত পট। কোনি যেন মতি নন্দীর মানস কন্যা। সৎপথে যে সাফল্য পাওয়া যায় তা কোনি নিজের জীবন দিয়ে প্রমাণ করে। তাই এই চরিত্র সূর্যের মত দীপ্তবান, চন্দ্রের ন্যায় কোমল, গোলাপের ন্যায় সুভাষিণী, মানবিক ও পাঠকের হৃদয়ের আঙিনায় রেখাপাত করে। বাংলার পিছিয়ে পড়া সাঁতারুদের কাছে আদর্শ মডেল এই কোনি। নিজের মনের ইচ্ছা থাকলে, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, দারিদ্রতাকে দূরে সরিয়ে আমরা কোনির মত আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব।

প্রশ্ন ২: ক্ষিতীশ সিংহ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য যে কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন তার পরিচয় দাও।

অথবা
ক্ষিদ্দা কীভাবে কোনির জীবনে প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল সে সম্পর্কে আলোচনা কর।

উত্তর:
আমাদের আলোচ্য মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষিদ্দা সত্যি-সত্যিই কোনির জীবনে অনুপ্রেরণা হিসেবে সাহস জুগিয়েছিল। নানা ঘটনার মাধ্যমে ক্ষিতীশ কোনিকে সাঁতারের চ্যাম্পিয়ন করানোর জন্য কঠোর অনুশীলনের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই অনুশীলনে সাঁতারের বিভিন্ন কৌশল কোনিকে শিখিয়েছিল ক্ষিদ্দা। সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে সাড়ে আট’টা পর্যন্ত চলছিল সাঁতার শেখানোর এই কসরত। ক্ষিতীশ কোনির জীবনশৈলী একটা ছকের মধ্যে বেঁধে দিয়েছিল। কোনি কখন কি কি খাবে সেই ব্যাপারেও ক্ষিতীশ নিয়ম তৈরী করেছিলেন। কোনিকে প্রতিদিন ট্রেনিং-এর পর পর দুটো ডিম, দুটো কলা ও দুটো টোস্ট খাওয়ার কথা বলেন। খাবারের বদলে আরো এক ঘণ্টা কোনিকে জলে থাকার কথা বলা হয়। খাবারের লোভ দেখিয়ে অমানুষিক পরিশ্রম করিয়ে নেওয়া অন্যায় জেনেও যন্ত্রণা আর সময় দুটোকেই হারানোর জন্য ক্ষিতীশ কোনিকে উৎসাহিত করে। কোনির টিফিনের ব্যবস্থা ক্ষিতীশকেই করে দিতে হয়েছিল কারণ তিনি জানতেন অনুশীলন চলাকালীন যা যা খাবারের প্রয়োজন তা কোনির পক্ষে জোগাড় করা সম্ভব ছিল না। কোনি টিফিনের বদলে টাকা চাইলে ক্ষিতীশ আর কোনির মধ্যে একটা বোঝাপড়া হয়। ক্ষিতীশ কোনিকে নানা উদাহরণ দিয়ে কোনিকে উদ্দীপ্ত করেন। ক্ষিতীশের তত্ত্বাবধানেই চলতে থাকে নিয়মিত শরীরচর্চা ও কঠোর অনুশীলন। মোট কথা কোনির সাফল্যে বা কোনিকে অনেক বড় সাঁতারু তৈরি করার পিছনে জীবনের অনুপ্রেরণা হিসাবে ক্ষিতীশ সত্যি সত্যি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন ৩: “অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল”- কোনি কীভাবে বাংলার সাঁতার দলে জায়গা পেল তা পাঠ্য উপন্যাস অবলম্বনে আলোচনা করো।

অথবা
“অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল”- কোনি কীভাবে বাংলা সাঁতার দলে স্থান পেল তা লেখো।

উত্তর:
মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের ‘দ্বাদশ’ পরিচ্ছেদ থেকে নেওয়া হয়েছে আমাদের আলোচ্য উক্তিটি। কোনির মাদ্রাজে যাওয়ার কারণ ছিল এই যে, মাদ্রাজে জাতীয় সাঁতার চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলার মেয়ে সাঁতারুদের দলে সে জায়গা পেয়েছিল।

কোনির মাদ্রাজ যাওয়া এবং বাংলা সাঁতারুদের দলে স্থান পাওয়ার পিছনে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের সাঁতারের কোচ প্রণবেন্দু বিশ্বাসের ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কোনির প্রধান প্রতিদ্বন্দী হিয়া মিত্রের প্রশিক্ষক হওয়া সত্ত্বেও বাংলার সম্মান এবং স্বার্থরক্ষার কথা ভেবেই বলে ওঠেন- ‘বেঙ্গলের স্বার্থে কনকচাঁপা পালকে টিমে রাখতে হবে।’ তুচ্ছ দলাদলি, নীচ মানসিকতা ছেড়ে বাংলার মান-সম্মানের কথা সবার আগে আমাদের ভাবা উচিত তা তিনিই বাকী-দের মনে করিয়ে দেন। শুধু ক্ষিতীশ সিংহকে জব্দ করাই যে জুপিটার সুইমিং ক্লাবের লক্ষ্য তা তিনি বুঝতে পারেন। তাই প্রণবেন্দু বিশ্বাস দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছিলেন- ‘মহারাষ্ট্রের রমা যোশির সঙ্গে ফ্রিস্টাইলে পাল্লা দেবার মত বাংলায় কেউ নেই, একমাত্র কনকচাঁপা পাল ছাড়া;’ তিনি আরো বলেন-‘স্প্রিন্ট ইভেন্টে ওর সমকক্ষ এখন বাংলায় কেউ নেই।’ যুক্তি নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি, বিচক্ষণতা দিয়ে বিষয়ের গুরুত্ব বোঝার পাশাপাশি সাঁতারের ভালোমন্দ চিন্তা নয়, প্রশিক্ষক হিসেবে ক্লাবের সংকীর্ণ দলাদলির ঊর্ধ্বে উঠে কোনির মনোনয়নে তাই প্রণবেন্দু বিশ্বাসই মোক্ষম কাজটি করেছিলেন এমনকি তিনি শেষমেশ বলেছিলেন যে, কনকচাঁপা পালকে চিটিং করে আপনারা এখানে হারিয়ে দিতে পারলেও সত্যকে কখনোই ধামাচাপা দেওয়া যায়না। এতকিছু শোনার পরও যদি আপনারা কনকচাঁপা পালকে বাংলা দলে জায়গা না দেন, তাহলে বালিগঞ্জ সুইমিং ক্লাবের মেয়েদের বাদ দিয়েই আপনাদের বাংলা সাঁতারের দল গঠন করতে হবে। এভাবেই কোনি বাংলা সাঁতারের দলে স্থান পায়।

Leave a Comment